জাতিগত নিধনের শঙ্কা

কারাবাখে সংকট আরও বাড়ছে

আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে দশকের পর দশক ধরে বিরোধ চলছে। গত সপ্তাহে সন্ত্রাস দমনের নামে আজারবাইজান এ অঞ্চলে সামরিক অভিযান শুরু করলে এ উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। তবে ২৪ ঘণ্টার মাথায় রাশিয়ার মধ্যস্থতায় দুপক্ষ যুদ্ধবিরতি সায় দিলে সংকট সমাধানের কিছুটা আশা দেখা দেয়।

তবে গতকাল রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) কারাবাখ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের সব জনগণ এ অঞ্চল ছেড়ে পাশের দেশ আর্মেনিয়ায় চলে যাবে। এ ঘোষণার পর আজ সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) অঞ্চলটি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন শত শত জাতিগত আর্মেনিয়ান। একসঙ্গে এত মানুষের দেশত্যাগে এই সংকট আরও ঘনীভূত হবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবে কারাবাখ অঞ্চলটি আজারবাইজানের অংশ হলেও সেটি জাতিগত আর্মেনীয় অধ্যুষ্যিত এলাকা। সেখানে এক লাখ ২০ হাজার আর্মেনীয় বসবাস করেন। বিরোধপূর্ণ এ অঞ্চল নিয়ে এরই মধ্যে দুটি যুদ্ধে জড়িয়েছে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া। প্রথমটি ১৯৯০-এর দশকে এবং দ্বিতীয়টি ২০২০ সালে। ২০২০ সালের যুদ্ধে রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার আগে কারাবাখের বেশকিছু অঞ্চল নিজেদের দখলে নিয়ে নেয় আজারবাইজান।

সন্ত্রাস দমনের নামে গত মঙ্গলবার সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেয় আজারবাইজান। তবে সামরিক অভিযানের ২৪ ঘণ্টার মাথায় আর্মেনীয়রা আত্মসমর্পণে রাজি হলে কারাবাখের ওপর সার্বভৌমত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বলে ঘোষণা করেন আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ। একই সঙ্গে রাশিয়ার মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় দুই দেশ।

যুদ্ধবিরতির পরপর আর্মেনীয়দের অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়ার কথা জানিয়েছে আজারবাইজান। তবে তাদের এমন আশ্বাসে আশ্বস্ব হতে পারেননি কারাবাখের নেতারা। কারাবাখ রিপাবলিকের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ডেভিড বাবায়ান বলেছেন, আমাদের জনগণ আজারবাইজানের অংশ হিসেবে থাকতে চায় না। ৯৯ শতাংশ মানুষ আমাদের ঐতিহাসিক ভূমি ছেড়ে চলে যেতে চায়। তবে তারা ঠিক কখন আর্মেনিয়ায় যাবে তা এখনো স্পষ্ট না।


জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী চায় আর্মেনিয়া

বিরোধপূর্ণ নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে এতদিন মধ্যস্থতা করে আসছিল রাশিয়া। সেখানে দুই হাজার শান্তিরক্ষী রয়েছে মস্কোর। তবে সম্পর্কে অবনতির জেরে এবার রাশিয়ার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে জাতিসংঘের দ্বারস্থ হয়েছে আর্মেনিয়া। দীর্ঘদিনের এই বিরোধপূর্ণ অঞ্চলের মানবাধিকার ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে অবিলম্বে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েনের আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

রাশিয়ার মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে দুই দেশ সম্মত হলেও এখনও আশ্বস্ত হতে পারেননি আর্মেনীয়রা। গত শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘে দেওয়া এক ভাষণে আর্মেনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরারাত মিরজোয়ান বলেছেন, নাগর্নো-কারাবাখে একেবারে মাঠপর্যায়ে মানবাধিকার ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত অবিলম্বে সেখানে জাতিসংঘের একটি আন্তঃসংস্থা মিশন মোতায়েনে সব প্রচেষ্টা গ্রহণ করা।

কারাবাখ সংকটের পর রাশিয়ার ঐতিহাসিক ঘনিষ্ঠ মিত্র আর্মেনিয়ায় রুশবিরোধী মনোভাব বাড়ছে। এ সংকটের জন্য রাশিয়ার বিশ্বাসঘাতকতাকে দুষছেন তারা। এ কারণে ক্ষোভ থেকে আর্মেনিয়ার রাজধানী ইয়েরেভানে রুশ দূতাবাসের সামনে প্রতিবাদ করেছেন। জনগণের এই ক্ষোভে ঘি ঢেলেছেন আর্মেনিয়ার পশ্চিমাপন্থি প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান।

বৈঠকে বসছেন এরদোয়ান

অঞ্চলটিতে যুগ যুগ ধরে বসবাসরত জাতিগত আর্মেনিয়ানরা পালিয়ে আর্মেনিয়ার মূল ভূখণ্ডে ঢুকছে। এতে নতুন করে শরণার্থীর ঢল সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমন বাস্তবতায় করণীয় নিয়ে আজ সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) আজারি প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোয়ান। তবে বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি আঙ্কারা।

কারাবাখে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার জাতিগত আর্মেনীয় বসাবাস করে। তাদেরই একজন নেতা গতকাল রবিবার রয়টার্সকে জানান, এই পরিস্থিতিতে তারা আজারবাইজানের অংশ হয়ে থাকতে চায় না। নিপীড়ন এবং জাতিগত নিধনের ভীতি কাজ করছে লোকজনের ভেতর।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানা গেছে, সোমবার ভোর ৫টা পর্যন্ত নাগোর্নো-কারাবাখ ছেড়ে প্রায় ৩ হাজার মানুষ আর্মেনিয়ায় প্রবেশ করেছে।  আর্মেনীয় সরকার বলছে, তারা হাজার হাজার শরণার্থীর চাপ নিতে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //